হালের তরুণদের কাছে বর্তমানে সময় কাটানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে কম্পিউটারে গেম খেলা। অনেকে আবার একে নেশা থেকে পেশায়ও পরিবর্তন করে ফেলেছেন। কারণ গেম খেলেও পেশাদার গেমার হয়ে আয় করা যায় বিপুল অর্থ এবং সুনাম। তাই এখন অনেক তরুণই নিজেকে পেশাদার গেমার হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
তবে বাংলাদেশে গেম নিয়ে তেমন কোনো উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই মাঝপথে এসে থেমে যাচ্ছেন অথবা পৃষ্ঠপোষকতাসহ অন্যান্য সহযোগিতা না থাকায় ভালো গেম খেলতে পারলেও আন্তর্জাতিক ই-স্পোর্টস লিগ বা ম্যাচগুলো খেলতে পারছেন অনেক গেমার। এসব বিষয় মাথায় রেখেই গেমারদের উন্নয়নে নানা ধরনের আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্নভাবে গেমারদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে গেমিং মাদারবোর্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিগাবাইটের বাংলাদেশ শাখা প্রধান খাজা মো. আনাস খান।
বাংলাদেশের গেমিং খাত, গেমারদের বর্তমান অবস্থা, উন্নয়ন, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশের খবরের মুখোমুখি হয়েছিলেন খাজা মো. আনাস। বিস্তারিত তুলে ধরেছেন এম রেজাউল করিম-
বাংলাদেশের খবর : আপনি তো অনেক দিন ধরে এ গেমারদের নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে যেখানে বিদেশের গেমারদের অবস্থান অনেক ওপরে সেখানে বাংলাদেশের গেমারদের অবস্থা কী মনে হয়েছে আপনার কাছে?
খাজা মো. আনাস : বাংলাদেশের গেমাররা যে পিছিয়ে আছে তা কিন্তু না। তারাও অনেক এগিয়েছে। ডাটা টু, সিএসগো গেম প্লেয়াররা দেশের বাইরে গিয়ে ইতোমধ্যেই গেম খেলে আসছে। আর তাদের পেছনে কিন্তু একমাত্র কোম্পানি হিসেবে নানা ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে গিগাবাইটই। আর আমরাই এখন গেমারদের সবকিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখছি। তবে আমি মনে করি এই গেমিং ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের জন্য স্যামসাং, ইন্টেলের মতো বড় কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের দেশে এই খাত আরো এগিয়ে যাবে। তারা যদি স্পন্সর করে তাহলে আমাদের দেশ থেকে অনেক আন্তর্জাতিক মানের গেমারকে বের করে আনা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের খবর : গেমারদের উন্নয়ন নিয়ে আপনারা কী কী করছেন?
খাজা মো. আনাস : বাংলাদেশে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ও গেমারদের নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে গিগাবাইট, এখনো করছে, ভবিষ্যতেও করবে। এই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গেমিং ফেস্ট আয়োজন করেছিলাম যেখানে পাঁচ শতাধিক গেমার সিএস গো, কড ফোর, রেইনবো সিক্স, ফিফা ১৮ এবং এনএফএস এমডব্লিউ গেম খেলার সুযোগ পান। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডেও আমাদের অনেক বড় ইভেন্ট ছিল যেখানে আমরা গেমারদের উন্নতমানের কম্পিউটারে গেম খেলার সুযোগ দেয়া, গেমের প্রতি উৎসাহ দিযে গেমের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে নানা ধরনের প্রণোদনা, উপহার দেওয়াসহ যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের খবর : গেমারদের উন্নয়নে বা গেমার তৈরিতে কী কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
খাজা মো. আনাস : শেষ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আমাদের কথা দিয়েছিলেন গেমিং সেক্টরের উন্নয়ন নিয়ে। ইতোমধ্যেই তিনি অনেক কিছু করেছেন এবং আরো করবেন বলেও আমি আশাবাদী। এ ছাড়া আমাদের দেশের হাইটেক পার্কেও হয়তো গেম নিয়ে কাজ করা যেত। কিন্তু সেখানেও জাতীয়ভাবে কিছু করতে চাইলেও ব্যক্তিবাচক কেউ গিয়ে কিছু করতে পারবে না। এই জন্যও অ্যাসোসিয়েশন দরকার। এ ছাড়া আমি মনে করি, বাংলাদেশে গেমিং খাত নিয়ে ভাবার সময় হয়ে গিয়েছে। এই জন্য যদি এখন সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ আমাদের ডাকে, আমরা বেশ কিছু গেমারদের নিয়ে তাদের সঙ্গে অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও বসতে চাই। তাহলে গেমারদের চাহিদা অনুযায়ী সরকারিভাবে এই খাতের উন্নয়নে কাজ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের খবর: সরকারের সঙ্গে মিলে কি গেমারদের উন্নয়নে কিছু করা যায়?
খাজা মো. আনাস : সরকারের সঙ্গে অবশ্যই করা যায়। তবে এক্ষেত্রে কিছু বাধা আছে। যেমন সরকার কোনো খাতের উন্নয়নের জন্য একক ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করে না। তাই গেমারদের জন্য অ্যাসোসিয়েশন দরকার। আর এই অ্যাসোসিয়েশন করার লক্ষ্যেই আমরা ইতোমধ্যেই ক্লাব জোন তৈরি করেছি। এই ক্লাব জোনের মেম্বাররাই আমাদের প্রত্যেকটি ইভেন্ট নিয়ে কাজ করে। আমাদের প্রত্যেকটি গেমিং প্রতিযোগিতার জন্য সারা দেশের গেমিং লিডারদের নিয়েই আমরা আয়োজন করি। আর এজন্যই দেশের সব গেমারকে সমন্বয়তা দরকার। আর সবাইকে সমন্বয় করতেই অ্যাসোসিয়েশন দরকার। এই অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরে কাজ করছি। খুব শিগগির গেমারদের একটি অ্যাসোসিয়েশন হবে। এরপর আশা করি সরকারের সঙ্গে মিলে আমরা দেশীয় গেমারদের উন্নয়নে আরো ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখতে পারব বলে আমি আশাবাদী।
বাংলাদেশের খবর : আমাদের দেশ থেকে বিদেশে যেসব গেমার যাচ্ছে খেলতে, তাদের সাফল্য কেমন?
খাজা মো. আনাস : আমি তো বলব তাদের সফলতা ভালোই। কারণ, এখানে চিন্তা করতে হবে আপনি গেমারদের নিয়ে কতটুকু কাজ করছেন। কতটুকু সময়, অর্থ তাদের পেছনে ব্যয় করছেন। বাংলাদেশে এখন শুধু গিগাবাইট ছাড়া এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আর কেউ কাজ করে না। আর কেউ গেমারদের পেছনে বিনিয়োগ করে না। স্যামসাং, ডেল, আসুস, এইচপি, এমএসআই, ডব্লিউডি হার্ড ড্রাইভ, ইন্টেল, এএমডি এসব কোম্পানি কিন্তু বাংলাদেশি গেমারদের পেছনে এক টাকাও খরচ করে না। হয়তো তারা এক সময় করবে, সেজন্য একটা বাজার প্রয়োজন হবে। সেই বাজারটাই আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।
বাংলাদেশের খবর : এই খাত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
খাজা মো. আনাস : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে সবার আগেই আছে গেমারদের অ্যাসোসিয়েশন করা। এই অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের গেমিং খাত উন্নয়নে কাজ করবে। এ ছাড়া আমাদের দেশে গেমারদের খেলার জন্য কোনো স্টেডিয়াম নেই যা গেমারদের ভাষায় ক্যাফে। এ ছাড়া আগামী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডগুলোয় আমরা আরো বড় আয়োজন করতে চাই। যেমন প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা নিয়ে, সুন্দরভাবে গেমিং পিসিগুলো বসাতে চাই। বিভাগীয় পর্যায়ে গেমিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে, সেখান থেকে বাছাই করে ঢাকায় চূড়ান্ত আয়োজন করতে চাই।